আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতি, ধর্ম ও সংবিধান প্রসঙ্গে....-রাজীব ধর

আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতি, ধর্ম ও সংবিধান প্রসঙ্গে....-রাজীব ধর

--------------------------------------------------------

 আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে (করোনা মহামারীর সময়) আমার এক স্কুল বন্ধু, বলা নেই, কওয়া নেই, হুট করে ম্যাসেঞ্জারে ভয়েস পাঠালো, আমাকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য। আমি কেন বাংলাদেশের জেলায় জেলায় হিন্দুদের উপর হওয়া নির্যাতিত ঘটনাগুলো নিয়ে লিখি। এটা নাকি আমার দোষ। স্কুল বন্ধুর এই কথা শুনে আমি অনেকটা হতভম্ব হয়ে যায়। সেদিন তার কথাটা ঠিক যেন আমি হজম করতে পারিনি। ভাবলাম, সেই বন্ধু ঠিক কোন অধিকারে আমাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়? এই কথাটি বলার অধিকার কি বাংলাদেশ সংবিধান তাকে দেয়? তখন আমি তাকে বলেছিলাম, দোস্ত আমার লেখায় যদি কোনো তথ্য ভুল থেকে থাকে, সেটা আমাকে বল, আমি শুধরে নেব। কিন্তু তুই হুমকি কেন দিবি? তারপর সেই আমাকে ব্লক করে দেয়। কিন্তু তার কথাটি আমাকে অনেক অনেক দিন তাড়া করে বেড়াচ্ছিল....  

এরপর সময় অনেক গড়িয়েছে। হঠাৎ একদিন আমার কৌতূহল হলো সংবিধান পড়ার, আমাদের বাংলাদেশ সংবিধানে কি কি আছে তা জানার। ১৯৭২ সালের ৪ই নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশ গণপরিষদে আমাদের সংবিধান গৃহীত হয়, এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বা বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। আমাদের বাংলাদেশ সংবিধান পড়ে আমি যা জানলাম, তা হলো আমাদের সংবিধানে মোট ১৫৩টি অনুচ্ছেদ আছে। যে অনুচ্ছেদগুলোকে ১১ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আমি মূল সংবিধান-এর তৃতীয় ভাগের নাগরিক মানে জনগণের মৌলিক অধিকার-এর ২৬ থেকে ৪৭নং অনুচ্ছেদগুলো কুটিয়ে কুটিয়ে পড়লাম। ১৯৭২ সালের পরে এই পর্যন্ত আমাদের বাংলাদেশ সংবিধানে ১৭ বার সংশোধনী আনা হয়েছে। আমি ছোট মানুষ, আমি এসব সংশোধনীর ব্যাখায় যাবো না আজ। আমি শুধু জানতে চেয়েছি, আমার ছোটবেলার স্কুল বন্ধুটি আমাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার যে হুমকি দিয়েছিল, সেই অধিকার আমাদের সংবিধান তাকে দেয় কিনা? না এই অধিকার সংবিধান তাকে দেয় না। আমি আরো জানার চেষ্টা করেছি, এই যে বাংলাদেশে হিন্দুদের উঠতে বসতে, আমাদের মুসলমান ভাইদের দ্বারা হিন্দুদের যে ধর্মগত হেনস্তার শিকার হতে হয়, এটাও আমাদের মহান সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে কিনা? জন-নিরাপত্তা ও মানুষের মৌলিক অধিকার বলতে হিন্দুর জন্য আলাদা আইন বা মুসলমানদের জন্য আলাদা আইন সংবিধানে আছে কিনা? না, এই রকম কোনো বৈষম্যমূলক অনুচ্ছেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে রচিত আমাদের মহান সংবিধানে নেই। 

এগুলি যদি সংবিধানে না-ই থাকে, তাহলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে আলেম, ওয়ালামা ও মাদানীরা আমাদের হিন্দু দেব দেবতাদের হেয় করে, ঘৃণা ছড়িয়ে ওয়াজ মাহফিল করে কিভাবে? প্রকাশ্যে চিৎকার করে বলে কিভাবে মুর্তি পুজা হারাম? তারা আমাদের হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিতে বার বার আঘাত হেনে পার পায় কিভাবে? এই আলেম ওয়ালামাদের ক্ষমতাটা ঠিক আসে কোত্থেকে? কে দেয় তাদের হিংসা ও ঘৃণা ছড়ানোর এতো ক্ষমতা? আমাদের বাংলাদেশ কি আরব অঞ্চলের রাষ্ট্র? আমরা হিন্দুরা কি সৌদি আরবের মক্কায় গিয়ে বলেছি, ওখানে আযান দেয়া যাবে না? টুপি পড়া যাবেনা? যদি না বলি, তাহলে এখানে ওরা কিভাবে বলে আযানের সময় দুর্গা পুজার সন্ধ্যা-আরতির  বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখতে হবে? এই নিয়ম কি একটা গগনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নীতিমালার সাথে যায়? আমরা কি কখনো আরব অঞ্চলে গিয়ে ১৯৪৭ এর পাকিস্তানের (১৯৪৭ এ পাকিস্তান যেমন ভারত থেকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে মুসলিম রাষ্ট্র হয়েছিল, আজ খোদ পাকিস্তানের প্রদেশ বেলুচিস্তানের জনগন আওয়াজ তুলছে মোদিজী, মোদিজী, হামকো বাচালো। হামকো আজাদ করো। যে জাতির নিজস্ব সংস্কৃতির পরিচয় থাকে না, সেই জাতি বেশিদূর আগাতে পারেনা। বর্তমান পাকিস্তানের অবস্থাও তাই।) মতো হিন্দু রাষ্ট্রের দাবী করেছি? হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরবের আশে পাশে ওমানকে চেয়েছি, আরব আমিরাতকে চেয়েছি নাকি কাতারকে চেয়েছি? আজ থেকে ৬০০ বছর আগেও না পাকিস্তানে কোনো মুসলমান ছিল, না কাশ্মীরে কোনো মুসলমান ছিলো, না আফগানিস্তানে কোনো মুসলমান ছিলো, না বাংলাদেশে কোনো মুসলমান ছিলো, না ভারতে কোনো মুসলমান ছিলো? আমরা সনাতনী হিন্দুরা পুর্বের অখন্ড ভারতে (ভারত ভাগের আগে থেকে) বসবাস করছি সভ্যতার শুরু থেকেই। ভারতীয় উপমহাদেশে আরবের ধর্ম ইসলাম আসে মোঃ ঘুরি, বখতিয়ার খিলজি, বাবর, তৈমুর... এসব অসভ্য বর্বর ঘাতকদের হাত ধরে। তৎকালীন এই বর্বর ঘাতকরাই আরব, তুর্কি, উজবেকিস্তান থেকে এসে আমাদের হিন্দুদের মেরে কেটে ধর্মান্তরিত করে ইসলাম (কিছু কিছু জায়গায় ইসলামের দাওয়াত দিয়ে প্রচারও করেছিলো) গ্রহনে বাধ্য করেছিল। এদের হাত ধরে আরবের ইসলাম আসার পর ভারত থেকে আফগানিস্তান আলাদা হলো, পুর্ব (বর্তমান আমার বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান আলাদা হলো। আজ যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমারের প্রায় ৭০ কোটি মুসলমান জনগোষ্ঠী আছে, এদের ১%ও আরব থেকে আসা মুসলমান নয়। এরা সবাই ছিলো এক সময় হিন্দু। এরা যে এক সময় হিন্দু ছিলো, এই কথা আমি না, জীব বিজ্ঞানের ভাষায় DNA-ই বলবে। তাহলে তো এই উপমহাদেশের সব মুসলমানরা তো আমাদেরই ভাই।  আমাদেরই জাতি ছিল। আমাদেরই রক্ত ছিলো। তাহলে সমস্যা কি? না ভাই আমারও সমস্যা নাই। 

কিন্তু আমার সমস্যা সেখানেই হয়, যেখানে দেখি আমাদের শারদীয় দুর্গা পুজা এলে উগ্রবাদী মুসলমানরা মুর্তি ভেঙ্গে, পুজা মন্ডব ভেঙ্গে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চর্চা করে। আমার সমস্যা সেখানেই হয়, যেখানে দেখি বাংলাদেশে কিছু উগ্রবাদী মুসলমান হিন্দু-মুসলমানের অসম্প্রদায়িক সহাবস্থান পছন্দ করেন না। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের এখনো ৮০% মুসলমান ভাইরা দাঙ্গা, হাঙ্গামা, সাম্প্রদায়িক উস্কানি এসব কোনোভাবেই পছন্দ করেন না। আর এই সব উগ্রতা সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় উস্কানির মাধ্যমে। তারা আমাদের জনগনকে শিক্ষা দেয় না, সংবিধান মেনে চলার। কিছু অপ-রাজনীতিবিদরা নেপথ্যে থেকে আমাদের মুসলিম ভাইদের উস্কে দেন হিন্দুদের বিরুদ্ধে উগ্রতা ছড়ানোর জন্য। জাতি হিসেবে তো আমরা বাঙালি। আমাদের DNA এক। তাহলে কেন আমরা আরবের সংস্কৃতিকে জোরপুর্বক বার বার হিন্দুদের উপর চাপাতে যাবো? ইন্দোনেশিয়াতে তো এক সময় সবাই হিন্দু ছিলো। আজ ইন্দোনেশিয়া ৯৯% মুসলিমের দেশ। তাই বলে কি ইন্দোনেশিয়া তাদের পুর্বপুরুষের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিকে ভুলে গেছে? না যায়নি। আপনি ইন্দোনেশিয়ায় 'বালি'তে গিয়ে দেখেন, সেখানে হিন্দুদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে কিভাবে আগলে রেখেছে ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম জনগন ও সরকার। সেখানে আমাদের হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ "রামায়ন"কে জাতীয় গ্রন্থ বলতেও তাদের আপত্তি নেই। আর এখানে সীতাকুণ্ড'তে আরবের মহান দেবতা আল্লাহর নামে স্লোগান দিয়ে হিংসা ও ঘৃণা ছড়ানো হয়। যা আমরা ফেইসবুকের ভিডিও বা রিল-এ দেখি। এখনো পর্যন্ত হিন্দুদের আদি ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে দখল করার পাঁয়তারা চলে এইদেশে। একজন বাঙালি হিসেবে আমি এই লজ্জা রাখি কোথায়? আমরা এমন একটা বাঙালি জাতি, আমাদের আদিপুরুষ শ্রী রামের পত্নী সীতা দেবীর কুন্ড'টা পর্যন্ত সুরক্ষিত নয় আমাদের এই দেশে। এই দায় কার? আমি এই 'প্রশ্ন'টা গনতন্ত্রের মন্দির, আমাদের সংসদ ভবনের ৩৫০ জন মাননীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থার কাছে রাখলাম। কেন বার বার এমন হয়?

আমাদের মূল সংবিধানটি দাঁড়িয়ে আছে চারটি স্তম্ভের উপর। ১, গনতন্ত্র, ২, সমাজতন্ত্র, ৩, ধর্মনিরপেক্ষতা, আর ৪ নম্বর হলো জাতীয়তাবাদ। এবার আসি বাঙালী জাতীয়তাবাদ আসলে কি? বাঙালি জাতীয়তাবাদ আসলে কি কি সংস্কৃতি বহন করে? এদেশে এখনো অধিকাংশ মানুষই মনে করে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ হলো, বোরখা, টুপি, মোছহীন দাঁড়ি, জোব্বা, হিজাব, এসব বুঝি বাঙালি সংস্কৃতি। তাদের কাছে আমি জানতে চাই, এসব যদি বাঙালি সংস্কৃতি হয় তাহলে পবিত্র ইসলামের পুণ্যভূমি আরবের সংস্কৃতি ঠিক কোনগুলো? আমি নমস্কার ও একই সাথে ধন্যবাদ জানাই, সৌদি আরবের প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমির আব্দুল আল নাহিয়ানকে। যারা আরবের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারণ করে নিজেদের দেশকে অনেকটা দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এখন বলুন, আমরা যদি নিজেদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারণ না করি, আমাদের ৭০-৮০% সংস্কৃতি যদি বিদেশী সংস্কৃতি দ্বারা গ্রাস হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীতে বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা আগাবো কিভাবে? আমাদের নিজস্ব পরিচয় কি হবে? এই প্রশ্নগুলো আমি আমার দেশের ১৮ কোটি বাঙালির সামনে রাখলাম।

এই তো গত ৪ মাস আগে ১লা বৈশাখের সময় ফেইসবুকে একটা ভিডিও চোখে পড়েছিল। গন-পরিষদের বক্তা, তারেক মনোয়ার নাকি কি যেন নাম। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ১লা বৈশাখের মঙ্গল শোভা যাত্রায় ইঁদুর, পেঁচা ব্যবহার করা হবে কেন? এখানে "মঙ্গল শোভা যাত্রায়"ধর্মীয় প্রতীক কেন থাকবে? তার কথা শুনে বুঝায় যায়, তিনি আমাদের হিন্দু ধর্মকে ঈঙ্গিত করে বলেছেন। কারণ ইঁদুর হলো সিদ্ধিদাতা দেবতা গনেশের বাহন, আর পেঁচা হলো আমাদের হিন্দুদের বাণিজ্য দেবী মা লক্ষী দেবীর বাহন। তারেক মনোয়ার ভাই, আপনি বোধ হয় জানেন না, ইউনেস্কো আমাদের "শারদীয় দুর্গা উৎসব"কে বাঙালির সর্বকালের সেরা ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। না জানলে একটু খোঁজ নিয়ে দেখে নেবার বিনীত অনুরোধ করছি। আর হ্যাঁ, তারেক মনোয়ার ভাই, আপনি ১লা বৈশাখের মঙ্গল শোভা যাত্রায় ইদুর আর পেঁচা নিয়ে কটাক্ষ করে যে কথাটি বলেছেন, সেটা আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মহান সংবিধানের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

বছর দুয়েক আগে এক হিন্দু দিদির কপালে টিপ পড়া নিয়ে ঢাকার মহানগর এলাকায় কোনো এক পুলিশ অফিসার আপত্তি জানিয়েছিলেন। এবং হিন্দু দিদিটি কাউকে ভয় না পেয়ে সোজা থানা গিয়ে সেই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে, কেন তাকে কপালে টিপ পড়তে বাধা দেয়া হবে? সেই সময় এই ঘটনাটি দেশজুড়ে ভাইরাল হয়েছিলো। হিন্দু দিদিটির পক্ষে দাঁড়িয়েছিল হিন্দু-*সলিম বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা। আমিও হিন্দু দিদিটির পক্ষে বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে, যতদুর চিৎকার যায়, গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকার করেছিলাম। আমি এখন মনে করি ঐ দিদিটির প্রতিবাদ সঠিক এবং সাংবিধানিক ছিলো। আজ যদি সেই পুলিশ অফিসারের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংবিধান নিয়ে জ্ঞান থাকতো, তাহলে তাঁকে চাকরিও হারাতে হতো না। আর হিন্দু দিদিটিও হেনস্থার শিকার হতেন না।

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান সংগ্রামী  নেতা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক, জনগণের বন্ধু, মানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে অনন্য ও অসাধারণ একটা সংবিধান আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। যে সংবিধান-রচনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ডঃ কামাল হোসেন স্যার। যে সংবিধান গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে। আমি সেই মহান "সংবিধানিক" নীতিমালাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়। 

আজ যদি দেশের কিছু উগ্রবাদী *সলিম প্রতি বছর পুজা এলে, আমাদের জীবনযাত্রা চলার বিধান, মানে মুল সংবিধান কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, স্বেচ্চায় গাদ্দারী করে হিন্দুদের মন্দির ভেঙ্গে, মুর্তি ভেঙ্গে, কখনো বাড়িঘর লুটপাট করে, কখনো জমি দখল করে, কখনো হুমকি দিয়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম চালায়, সেখানে আমাদের স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্যটা আসলে কি? প্রশ্নটা আমি বিনীতভাবে রাষ্ট্রচালক কিংবা রাজনেতাদের কাছে রাখলাম।

আপনি, আমি যে ধর্মই পালন করি না কেন, সেটা ভাই আপনার, আমার নিজেরই একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি। আপনার আস্থা, আপনার অনুভূতি আহত হলে, আপনি আপনার এলাকার থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে পারেন, কিংবা তার বিরুদ্ধে F.I.R (First information report) করতে পারেন। কিন্তু আপনি কোনোভাবেই কারো জান-মালের নিরাপত্তা, সম্পত্তি দখল বা বিনষ্ট করতে পারেন না। এই অধিকার সংবিধান আপনাকে দেয় না।

আমার বিবেচনাঃ উপরে উল্লেখিত  "আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতি, ধর্ম ও সংবিধান প্রসঙ্গে" এই শিরোনামের মুল প্রবন্ধটি আমার লিখতে সময় লেগেছে ১৩ দিন। কিন্তু এই যথাযথ তথ্যগুলো সঠিকভাবে জানতে ও পড়তে আমি সময় নিয়েছি ৩ বছরেরও অধিক। আমি এখানে যা বলেছি, তা সংবিধান মেনেই বলার চেষ্টা বলেছি। তারপরও যদি  কোনো ব্যারিস্টার, (যাঁরা লন্ডন থেকে ল' পড়ে আসেন) কোনো এ্যাডভোকেট (যাঁরা বাংলাদেশে ল' পড়েন) কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কোনো মাননীয় বিচারক, এমন কি বাংলাদেশের যেকোনো সর্ব সাধারণ মানুষ আমার এই লেখার তির্যক সমালোচনা ও আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন। আমি উত্তর দিতে সব সময় প্রস্তুত আছি। গত দীর্ঘ তিন বছরের গবেষণার ফসল আমার রচিত এই লেখা নিয়ে কারো যদি আপত্তি থেকে থাকে, আপনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে পারেন, আমার মতের সাথে দ্বিমত থাকলে বাংলাদেশের যেকোনো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগ পাইলে আমার বিরুদ্ধে F.I.R করে, আমাকে রিমাইন্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা (Interrogation) করতে পারেন, কিন্তু কেউ আমাকে স্বেচ্ছায় গাদ্দারী করে, ভারতের পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি কিংবা জানে মেরে ফেলার হুমকি দিতে পারেন না। এই অধিকার আমি আপনাকে দিইনি। এবং আমার বাংলাদেশের সংবিধানও আপনাকে এই অধিকার দেয়নি। 

মন্তব্যঃ যারা আমার এই প্রবন্ধটি প্রয়োজন মনে করবেন, তারা অবশ্যই আমার লেখাটি নিজেদের টাইমলাইনে, বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর যারা প্রয়োজন মনে করবেন না, তারা আমার চিন্তাচেতনা, আমার লেখাকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেবেন। কারণ আপনি চুপ থেকে, একান্তই নিরব থেকে, রাষ্ট্র কিংবা সমাজকে বদলানো তো দুরের কথা, নিজেকেই তো বদলাতে পারবেন না।

ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা না বললেই নয়, আমি যা কিছু পড়ি, যা কিছু শিখি, শুধুমাত্র জানার কৌতূহল থেকেই পড়ি। জানার কৌতূহল থেকেই শিখি। কোনো হায়েস্ট মার্ক কিংবা উচ্চ ডিগ্রিধারী সার্টিফিকেটের জন্য আমি কখনোই পড়ি না। মানুষের ইউনিক আইডিয়োলজি, ইউনিক সৃষ্টিশীল চিন্তাকে সার্টিফিকেট দিয়ে যারা পরিমাপ করে, আমি তাদের এই সিস্টেমটাকেই ঘৃণা করি।

আরেকটা ফ্রি এডভাইস দিই, -আসছে আগামীর সময়ে যাদের সফটওয়্যার জ্ঞান থাকবেনা, যাদের নিজস্ব সৃজনশীল, সৃষ্টিশীল চেতনা থাকবে না, তারা আগামীর পৃথিবীতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা নির্দিষ্ট উচ্চডিগ্রীধারী সার্টিফিকেট দিয়ে কিছুই করতে পারবে না। তাঁরা অচল ও অর্থহীন হয়ে যাবে। তার প্রভাব অলরেডি পৃথিবীতে শুরু হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি 'ইলন মাস্ক' তাঁর প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের কোনো অনার্স, মাস্টার্স কিংবা বি,.বি.এর কোনো সার্টিফিকেট ছিলো না। ছিলো শুধু সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীলতা।


Jane Smith

Itaque quidem optio quia voluptatibus dolorem dolor. Modi eum sed possimus accusantium. Quas repellat voluptatem officia numquam sint aspernatur voluptas. Esse et accusantium ut unde voluptas.