রাজীব ধর-এর কাব্যগ্রন্থ

রাজীব ধর-এর কাব্যগ্রন্থ

ইরান কিভাবে একসাথে পাকিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকের ইসরায়েলি গোয়েন্দা দপ্তরে হামলা চালালো? তবে কি ইরান গোপনে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র বনে গেল?

------------------------------------------------------

গত এক মাস আগে পাকিস্থান ভিত্তিক সুন্নি জঙ্গি সংগঠন জইশ আল-আদল গৌষ্ঠী ইরানে ঢুকে হামলা করেছিল। এতে বেলুস্তিস্থান সীমান্তবর্তী ইরানের এক থানায় হামলা চালিয়ে ১১ জন ইরানি পুলিশকে হত্যা করে পাকিস্তানি উদীয়মান জঙ্গি সংগঠন জইশ আল-আদল। আর ইরান সেই হামলার জবাব দেয় গত ১৬ই জানুয়ারি পাকিস্তানের ১২২ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে জঙ্গি সংগঠন জইশ আল-আদলের সদর দপ্তরে ভয়াবহ হামলা করে গুড়িয়ে দিয়ে। এতে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ আল-আদলের নিহত হয় ১০০+ এক্টিভ জঙ্গি! কিন্তু বর্তমান পাকিস্তানের কেয়ার টেকার সরকার মোহাম্মদ কাকার আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বলেছেন, এই হামলায় শুধু তাদের দুইজন শিশু নিহত ও তিনজন মেয়ে আহত হয়েছেন। ইরানের এই হামলার  ইরান-পাকিস্তানের কুটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। গতকাল পাকিস্তান সরকার ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে। এবং এটা বলেছেন, তারা ইরানকে উচিত জবাব দেবেন।

পাকিস্তানে এই হামলাটা করার আগে সিরিয়ায় ইরান বিরোধী জঙ্গিদের আস্তানায় হামলা চালায়। আবার একই দিনে ইরাকে অবস্থিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তরে হামলা করে পুরো বিল্ডিং গুড়িয়ে দিয়েছে। তার মানে ইরান একই সাথে তিনটি দেশে ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে আক্রমণ করেছে। ইরান পাকিস্তানে হামলাটা তখনই চালান, যখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় জয় শংকর ইরানের মাটিতে গিয়ে ইরানের বিরুদ্ধেই নালিশ করে বসেন। কি ভাই, আমাদের জাহাজে কেন তোমাদের সমর্থক ইয়েমেনি হুথি জঙ্গিদের হামলা? যদিও ইয়েমেনি জঙ্গি হুথিরা কয়েকদিন আগে ভারতের যে জাহাজ ডাকাতি করে আটক করেছিল, পরে ভারতের নেভী প্যারা কমান্ডাররা সেখানে লোহিত সাগরে গিয়ে হুথি সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে নিজেদের জাহাজ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সেই সময় ভারত যখন এ্যাকশন মুডে ছিল, ইরান তখন তড়িঘড়ি করে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্টেটমেন্ট দেন, ভারতের জাহাজের উপর তারা হামলা চালাইনি। এই বিষয়ে জানতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শংকর ১৬ই জানুয়ারি ইরান সফরে গিয়েছিলেন। যেই না ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানের মাটিতে গিয়ে পা রাখলো, সেদিন রাতেই ইরানের তরফ থেকে পাকিস্তানে খুব বড়সড় জবরদস্ত মিসাইল হামলা হলো! এতে ১০০+ জঙ্গি নিহত হয়। এই হামলার পর ইরান জানায়, ইরান রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে দেশের জঙ্গি সন্ত্রাসী গৌষ্ঠী হামলা করুক না কেন, আমরা তাদের একইঞ্চিও ছাড় দেব না! এরপর পাকিস্তানের ভিতর জঙ্গি বিরোধী ইরানের এই মিসাইল হামলাকে সমর্থন করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বিবৃতি দেন,- ইরানের আত্মপক্ষ অধিকার রয়েছে নিজেদের দেশের নিরাপত্তার জন্য তারা জঙ্গিদের উপর এয়ারস্ট্রাইক চালাতে পারে। কারণ ভারত আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ভারত বিরোধী জঙ্গিদের পৃথিবীর যেখানে পাবে সেখানেই গিয়েই তাদের হত্যা করবে। এবং ভারত গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানে আততায়ীর মাধ্যমে অনেক জঙ্গিকে খতম করে তার প্রমাণও দিয়েছেন।এখন ইরানও পাকিস্তানে হামলা করে বুঝিয়ে দিল, আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জঙ্গি লেলিয়ে দিলে, তার পরিমাণ এই রকম ভয়াবহই হবে!

স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন তো আসেই। ইরান একটি নন-নিউক্লিয়ার বোমার রাষ্ট্র হয়েও কিভাবে  ইরাকে অবস্থিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দপ্তরে হামলা চালালো? আবার একই সাথে সিরিয়া ও পাকিস্তানেও হামলা চালালো। হঠাৎ ইরানের এই সাহস আসলো কোত্থেকে? আর এই কয়দিনে ইরান যেই মিসাইল হামলা চালাচ্ছে, তার সবকটি হামলায় ছিলো একেবারে নির্ভুল! আর ইরানি প্রযুক্তির মিসাইলগুলো কিন্তু সঠিক লক্ষ্য টার্গেট করে হামলা করতে পুরোপুরি সক্ষম। ইরানের এই একশ্যান মুড দেখে আমেরিকা-ইসরাইয়েলও এবার চিন্তিত হয়ে পড়লো। 

আন্তর্জাতিক মহলে এমনও কানাঘুষা চলছে যে, ইরান না আবার তলে তলে পারমাণবিক বোমার শক্তিধর রাষ্ট্র বনে গেল না তো! এমনও শোনা যাচ্ছে, গত ৭ই অক্টোবর ফিলিস্তিনি গাজার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসকে সামনে রেখে ইসরায়েলে ভোরের দিকে সাধারণ জনগণের উপর যেই আচমকা ভয়ংকর হামলাটি হয়েছিল, এটা ছিল মূলত ইরানের পরিকল্পনা। কারণ ইরান চাইছিল, এই হামলার পর আমেরিকা-ইসরাইয়েল ফিলিস্তিনের জঙ্গি সংগঠন হামাসকে মোকাবেলা করতে ব্যস্ত থাকবে, আর এই সুযোগে ইরান তাদের মাটির ভেতর মানে আন্ডারগ্রাউন্ডে পারমাণবিক বোমা বানানোর মিশন সাকসেস করবে। পুরো আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইরান এমন একটি রাষ্ট্র, যাকে আমেরিকা এখনো পর্যন্ত কন্ট্রোলে আনতে পারেনি। আর পুরো মুসলিম বিশ্বে ইরান এমন একটি শিয়া মুসলিম রাষ্ট্র, যারা নিজস্ব টেকনোলজি ও নিজস্ব প্রযুক্তির উপর ভর করেই ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতির সেনশন ও সামরিক আগ্রাসনকে বছরের পর বছর প্রতিরোধ করে আসছে। পুরো বিশ্বে ইরান রাষ্ট্রটি এমন একটি ভৌগোলিক অবস্থানে আছে, যা ইউরোপ-আমেরিকার বরাবরই মাথা ব্যথার কারণ। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বিশ্বের যতগুলো দেশের তেল রপ্তানি আমদানির লেদদেন হয়, সেই তেলের জাহাজগুলো ইরানের হরমুজ প্রণালী মাধ্যমেই যাতায়ত করে।  

এখানে বুঝতে হলে, আগে আমাদের জানা প্রয়োজন, হরমুজ প্রণালী আসলে কি? হরমুজ প্রনালী হলো আন্তর্জাতিকভাবে খনিজ তেলবাহী জাহাজ যাতায়াতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। বিশ্বব্যাপী পেট্রোলিয়াম পরিবহনে প্রণালীটির কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। জলপথটির সবচেয়ে সরু অংশের দৈর্ঘ্য ২১ মাইল এবং প্রস্থ দুই মাইল। মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন কর্তৃপক্ষের মতে, ২০০৯ সালে সমুদ্রপথে বৈশ্বিক খনিজ তেল বাণিজ্যের ৩৩ শতাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে সম্পাদিত হয়। ২০১৯ সালে হরমুজ প্রণালী দিয়ে এক দিনে এক কোটি ৯০ লক্ষ ব্যারেল খনিজ তেল পরিবাহিত হয়। এ অঞ্চল দিয়ে তেল পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ নিয়মিত ইরানের পারস্য উপসাগরে পাহারা দিচ্ছে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত তেলের বেশির ভাগই এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যায়। জাপানের আমদানিকৃত তেলের তিন-চতুর্থাংশ হরমুজ প্রণালীর ওপর দিয়ে নিয়ে যায়। আর চীনের আমদানিকৃত তেলের অর্ধেকই আসে হরমুজ প্রণালী হয়ে। হরমুজ দিয়ে প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেলের মতো তেলজাত দ্রব্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এর সঙ্গে আছে তরলীকৃত গ্যাসও। আর এই হরমুজ প্রণালীই হলো অনেকটা ইরানের দখলে। মূলত ইরান-আমেরিকার দীর্ঘ বছরের লড়াই হলো এই হরমুজ প্রণালীকে কেন্দ্র করেই।

তবে ইরান এখানেই থেমে থাকেনি। এখন ইরানের সমর্থক ইয়েমেনি হুথি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও চলছে ইরানের ইশারায়। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। ইয়েমেনি হুথি সন্ত্রাসীরা কখনোই চাই না, এই হরমুজ প্রণালী দিয়ে আমেরিকা, ইউরোপ ও ইসরাইলের তেলবাহী জাহাজ যাতায়াত করুক। এই জন্য ইয়েমেনি হুথিরা একের পর এক পশ্চিমা তেলবাহী জাহাজগুলো লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালাচ্ছে। সেই কারণে ভারতও খনিজ তেলবাহি জাহাজ নিয়ে অনেক পেরাশানি অবস্থায় আছে। এই পেরেশান কমাতেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শংকরের ইরান সফর। তবে আমার কাছে সব কিছু ছাপিয়ে গেল ইরানের একশ্যান মুড দেখে। ইরানের একই সাথে তিন দেশে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা দেখে আমার মনে হলো, ইরান গোপনে তাদের সামরিক নীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ইরান যদি গোপনে নিউক্লিয়াস পাওয়ার রাষ্ট্র না হতো, তাহলে ইরান কখনোই একই সাথে তিন দেশে হামলা করার রিস্ক নিতো না। এটা আমার অভিমত।  


Jane Smith

Itaque quidem optio quia voluptatibus dolorem dolor. Modi eum sed possimus accusantium. Quas repellat voluptatem officia numquam sint aspernatur voluptas. Esse et accusantium ut unde voluptas.