...আমি তাকে মেরে ফেলেছি...
আলী ইমাম খান অনু, সে ঝালকাঠি শহরের ফকিরবাড়ি সড়কের ছেলে।
সে তার পিতার সাথে দলিল লেখক হিসাবে কাজ করতো এবং একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সহ-সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিল।
সায়মা পারভীন একই পাড়ার মেয়ে। সে দেখতে খুব সুন্দর এবং তার চেহারায় মায়া ছিল। তার হাঁটাচলা ও বাচনভঙ্গি ছিল চিত্তাকর্ষক। অনু তার এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ।
একদিন অনু সায়মার কাছে তার মুগ্ধতা প্রকাশ করে। সায়মার কাছ থেকে ভালো সাড়া পায় সে। এতে অনুর মনে একটা অন্যরকম অনুভূতি জেগে উঠলো। যে অনুভূতি তাকে সায়মার আরো কাছাকাছি নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে সে সায়মাকে বলে যে, সে তাকে ভালোবাসে। অনুকে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব না দিয়ে লাজুকভাবে সরে গেল সায়মা।
কিছুক্ষণ পরে, অনেক চিন্তা করার পর, সে অনুকে তার স্বীকারোক্তির কথা জানায়। সেও অনুকে ভালোবাসে। সেও অনুর প্রতি মুগ্ধ হয়।
সায়মার এমন ইতিবাচক সাড়া পেয়ে অনুর মন খুশির সীমা ছাড়িয়ে যায়। সে খুশিতে আকাশে-বাতাসে উড়তে থাকে। তখন সায়মাকে নিয়ে সাজিয়ে বসে ভবিষ্যতের দারুণ এক খসড়া।
একই পাড়ায় থাকার সুবাদে প্রতিদিনই দেখা-সাক্ষাৎ হতো তাদের। মাঝে মাঝে দুজনে ঘুরে বেড়াতো। হোটেল রেস্তোরাঁয় পছন্দের খাবার খেতো। সায়মাকে তার পছন্দমতো কেনাকাটা করে দিত সে।
সাড়ে চার বছর এভাবেই চলতে থাকে তাদের প্রেম। তখন তাদের মনে হলো বিয়ে করার দরকার। চুপিসারে এভাবে আর কতদিন লুকিয়ে প্রেম করবে। কিন্তু তাদের আশঙ্কা এই বিয়েকে দুই পরিবার স্বীকৃতি দেবে কি না। এই আশঙ্কা বুকে নিয়ে আরো কিছু দিন কাটায় তারা।
সায়মা একদিন অনুকে তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলে। এরপর অনু তার পরিবারকে সাড়ে চার বছরের সম্পর্কের কথা জানায় এবং তার বাবাকে সায়মার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে বলে।
কিন্তু অনুর ভয় সত্যি হলো, অনুর পরিবার এই বিয়েতে কিছুতেই রাজি হয়নি। তারা সাফ জানিয়ে দেন, এই বিয়ে কখনোই সম্ভব নয়, এই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো।
সাড়ে চার বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক এভাবে বললেই তো আর শেষ করা যায় না।
অনু সায়মাকে বিষয়টা খুলে বলে, তখন তারা পরিবারকে না বলে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। যে সিদ্ধান্ত সেই কাজ। অনু গোপনে বন্ধুদের নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে সায়মাকে বিয়ে করে ফলে।
পরিবার রাজি না থাকায় নতুন স্ত্রীকে বাবার ঘরে তুলা অনুরের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই সে শহরে একটি সুন্দর ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে তার নতুন স্ত্রীর সাথে সংসার জীবন শুরু করে।
তার ভালোবাসা পূর্ণ হওয়ায় সে খুবই খুশি ও আনন্দিত হয়। সে ঠিক যাকে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য খসড়া করেছিল তাকেই পেয়েছে।
কিন্তু অনুর কী দুর্ভাগ্য।
পরিবারের বিরুদ্ধে বিয়ে করে সে যেন তার জীবনের খসড়া মুছে দিচ্ছে। হৃদয়ে আশার ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ঝরে ঝরে পড়তে থাকে তার পাপড়িগুলো। স্বপ্নের পাখি ডানা ঝাপটানোর সাথে সাথে তার প্রতিটি ডানা ভেঙ্গে যেতে থাকে। এটি জমিনে ধসে পড়া কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে ওঠে।
তাদের বিয়ের তিন মাস যেতে না যেতেই, তার সুন্দরী স্ত্রী তার মামাতো ভাইয়ের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। রাতের পর রাত কাটিয়ে দেয় তার সাথে প্রেম করে। সে গভীর রাতে অন্য ছেলেদের সাথেও মেসেঞ্জারে অশ্লীল চ্যাটিংয়ে লিপ্ত হত। যা দেখার পর কেউ সভ্য বলবে না তাকে।
সায়ামা তার স্বামীর অগোচরে দিনের পর দিন এমন জঘন্য ও নোংরা কাজ করে চলেছে। কিন্তু সে নিজেকে তার স্বামীর কাছে একজন ফেরেশতার মতো উপস্থাপন করে, যেন সে জানে না কীভাবে ভাজা মাছকে উল্টাতে হয়। তার দ্বারা এমন নীচ ও জঘন্য কাজ ঘটতে পারে এটা ভাবা যেন তার স্বামীর জন্য দুরূহ ব্যাপার।
তবে এটা সত্য যে, এমন অনৈতিক সম্পর্ক বেশিদিন অজানা থাকে না, তা যতই চুপিসারে করা হোক না কেন, একদিন ধরা পড়তেই হয়। সায়মার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। সে যে ফেরেশতার ছদ্মবেশে বসবাসকারী একটা শয়তান তার স্বামী অনুর কাছে তা প্রকাশিত হয়।
আগেই বলেছি, অনু সায়মার প্রতি খুব মুগ্ধ ছিল, সে সায়মাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসত। সে তার প্রতি এতটাই দুর্বল ছিল যে, সায়মা তার সাথে প্রতারণা করেছে এবং অন্য ছেলেদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করেছে জেনেও সে তার প্রতি কঠোর হয়নি। পরম মমতায় সে তার স্ত্রীকে এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে ফিরে আসতে বলে। কিন্তু তার কী দুর্ভাগ্য। তার স্ত্রী তাকে কোন পাত্তাই দেয়নি। সে তার মত চলতে থাকে।
দীর্ঘ দেড় বছর তাকে বোঝানোর পরও সে এ পথ থেকে ফিরে আসেনি। একপর্যায়ে অনু বিরক্ত হয়ে সায়মার প্রতি কঠোর হয়। তাদের মধ্যে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা তখন লেগেই থাকে। তাদের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। একপর্যায়ে সায়মা অনুকে ছেড়ে তার বাবার বাড়িতে চলে যায়।
সে তার বাবার বাড়ি গিয়ে তার স্বামীকে হুমকি দিয়ে বলে যে, যদি সে বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে নারী নির্যাতনের মামলা করবে এবং তাকে জেলে পুরে দেবে।
স্ত্রীর এমন হুমকি পেয়ে অনুর রক্ত গরম হয়ে যায়। মাথায় খুন চেপে ধরে। ক্ষুব্ধ নেকরের মতো তখন সে তার স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। যে বিশ্বাসের মূল্য দিতে জানে না তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
সেই সিদ্ধান্তই কাজ।
সে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক বুঝিয়ে সায়মাকে ইকোপার্ক সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে আসে। সেখানে অনু সায়মাকে শেষ সুযোগ দিয়ে সংশোধন হতে বলে, এই ধরনের বিবাহ বহির্ভূত অন্যায় থেকে ফিরে আসতে বলে। কিন্তু সায়মা তখনো তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। ওরে হতভাগী সায়মা!
তারপরও যদি সে তার স্বামী অনুকে তার এমন অসামাজিক কাজ থেকে ফিরে আসার কথা বলত, তাহলে অনু তার পরিকল্পনা বদলে ফেলত। কিন্তু সে তা করেনি। তাই অনু তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হয়, সে তার ব্যাগ থেকে একটি ছুরি বের করে সায়মার বুকে বিদ্ধ করে, যার ফলে প্রথম আঘাতেই সায়মা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে সে সায়মার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবারও সায়মার বুকে তিন তিনবার ছুরিকাঘাত করে।
স্ত্রীকে হত্যার পর সে তার পরিচিত কয়েকজনকে ফোন করে পুলিশ পাঠাতে বলে।
পুলিশ আসতে দেরি করলে সে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে ফেসবুকে কয়েকটি স্ট্যাটাস দেয়। পরে সে নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে বলে, আমি আমার স্ত্রীকে হত্যা করে এসেছি, আমাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করুন। পুলিশ সুপার ভেবেছিলেন হয়ত সে নেশা করা এসেছে, মাথা ঠিক নেই তাই আবোল তাবোল বকছে। তা না হলে কেউ থানায় এসে হত্যার কথা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করে। খুনিরা পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আর সেই খুনিদের ধরতে পুলিশকে দিনরাত অভিযানে নামতে হয়।
অথচ সে কিনা তার স্ত্রীকে হত্যা করে আত্মসমর্পণ করছে? এটা খুবই আশ্চর্যজনক!
তখন পুলিশ অনুকে জিজ্ঞেস করে, তুমি তোমার স্ত্রীকে কোথায় মেরেছ?
এরপর সে বলে, ইকোপার্ক সংলগ্ন পরিত্যক্ত জমিতে।
পুলিশ বলল, চল, ওখানে নিয়ে যা।
অনু তাই করল, পুলিশকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেল। পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখতে পায় একটি লাশ নির্মমভাবে পড়ে আছে।
অনু তখন বলে, স্যার, এইটা আমার বউ, ওকে নিজের হাতে মেরেছি। আমি তার বুকে চারবার ছুরিকাঘাত করেছি। বিশ্বাস না হলে দেখুন, ছুরিটা এখনো তার বুকের বা পাশে আটকে আছে।
বিশ্বাস করুন স্যার, আমি তাকে মেরে ফেলেছি।
তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ বিস্মিত হলো। কারণ তারা খুব কম মানুষ দেখেছে যারা হত্যার পর আত্মসমর্পণ করে সবকিছু স্বীকার করে।
স্ত্রীকে হত্যার পর আনু ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়,
সুদীর্ঘ সাড়ে চার বছরের ভালোবাসা ছিল আমাদের। আলহামদুলিল্লাহ, মুসলিম শরিয়াহ অনুযায়ী আমরা দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সারা জীবন একসঙ্গে থাকব। কিন্তু বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। অতঃপর বউ ধীরে ধীরে আমার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে কেমন জানি এড়িয়ে যেতে থাকে।
আমার বউ তার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে সারা রাত চ্যাটিং করত। তার নাম আসিফ ইকবাল।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে জানেন তো? চোরের দশ দিন আর গেরস্তের এক দিন! আমাদের বেলায়ও ঠিক ঘটেছে, তাই আমার বউ আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি।
গত শনিবার সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় আসতে দেখি। তখন তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিই। তারপর সে অনেক অনুনয় বিনয় করে আমার কাছে ফোন ফেরত চায়। পরে বউয়ের ফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে পরকীয়া প্রেমিকের অশালীন ম্যাসেজ দেখে আমি নির্বাক হয়ে যায়। আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
বউ সবসময় আমার সামনে হুজুর সেজে থাকত, এমন আচরণ করত মনে হয় যেন সে ভাজা মাছটাও উলটে খেতে পারে না। কিন্তু আজ হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমার বউয়ের আসল চরিত্র।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তুমি ওড়না ছাড়া তোমার মামাতো ভাইকে ছবি দিয়েছ কেন?
জবাবে সে বলে, খোদার কসম,আমি এমনিই দিয়েছি! তারপর আমি যখন তাদের ফ্রিলি কথাবার্তা বলার টপিক সম্পর্কে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকি, তখন সে কোনো উত্তর দিতে পারে না। তখন বলে, আমার সঙ্গে নাকি তার সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে! এরপর হঠাৎ করে দেখি সে তার আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলেছে! তারপর আমি আবার রিকভার দিয়ে আইডিতে ঢুকে দেখি গুরুত্বপূর্ণ অনেক চ্যাটিং ডিলিট করে ফেলেছে আমি যেন তার কিছুই না দেখতে পারি সেজন্য। সে অন্য সবার ম্যাসেজ ডিলিট করলেও প্রাণ ভ্রমরার ম্যাসেজ ডিলিট করতে পারেনি। তার আগেই আমি আইডি রিকভার করতে সক্ষম হয়েছি এবং স্ক্রিনশট রাখতে সক্ষম হয়েছি।
কিছুক্ষণ পর সে তার মায়ের নম্বর থেকে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, নারী নির্যাতন আইনে মামলা দিয়ে সে নাকি আমার জীবন ধ্বংস করে দিবে। তারপর অনেক ভেবেচিন্তে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বিশ্বাসঘাতক বেঈমানের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এ জন্য নিজের হাতে বউটাকে পরম করুণাময়ের কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দিলাম। পরপারে ভালো থেকো বউ, পরকীয়ার মজা এইবার অন্তত বুঝলা!