বরাবর
মহাপরিচালক
বাংলাএকাডেমি। ঢাকা।
বিষয়: পুরস্কার ফেরত দেওয়া।
তারিখ: নাটোর। ২৮. জানুয়ারি. ২০২৪
জনাব,
২০১৪ সালে আমাকে কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল। আমি সেই সম্মান ও পুরস্কার গ্রহণ করেছিলাম।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই পুরস্কার আমার কাছে বোঝা মনে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান যদি সম্মানের আসন হারায়, তখন পুরস্কার তার মূল্য হারায়।
সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, আমলাতন্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া বাংলা একাডেমির পরিচালনা পদ্ধতি সচেতন মানুষের আস্থা হারিয়েছে। কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন হয় না প্রায় আড়াই দশক যাবত। এই অবস্থায় পুরস্কারটি বহন করা আমার কাছে তাৎপর্যহীন মনে হচ্ছে। আমি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে পুরস্কার ফেরত দিচ্ছি। সঙ্গে প্রাপ্ত অর্থমূল্যের চেক পাঠাচ্ছি।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাধিত হবো।
শুভেচ্ছান্তে
জাকির তালুকদার
আলাইপুর। নাটোর।
ফোন: ০১৭১১৫৭৪৮৬২
সংযুক্তি
বাংলা একাডেমির সমস্যা এবং কার্যক্রম নিয়ে ১০ বছরে তিনজন মহাপরিচালকের সাথে কথা বলেছি। কখনো একা, কখনো আরো কয়েকজন লেখক-কবির উপস্থিতিতে। তাদের দুইজন প্রয়াত। একজন বর্তমানের ডিজি। তারা কেউ সমস্যাগুলিকে অযৌক্তিক বলেননি। কিন্তু প্রতিকারের চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়নি।
কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন খুব দরকার। গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু ২৫ বছর ধরে নির্বাচন দেওয়া হয় না। নির্বাচিত সদস্যের পক্ষে সম্ভব কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় জোরালো ভূমিকা রাখা। কিন্তু সেই সুযোগ বন্ধ করে রেখেছে বাংলা একাডেমি। পছন্দের লোকদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি তৈরি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মহাপরিচালকসহ একাডেমির কর্মচারি-কর্মকর্তারাই সর্বেসর্বা। তারাই নির্ধারণ করেন একাডেমির আলোচনা অনুষ্ঠানগুলিতে কাদের কাদের ডাকা হবে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দই মানদণ্ড তাদের। সেইসাথে তল্পিবাহকতাই বিশেষ গুণ। মেধা বা যোগ্যতা নয়।
প্রকাশনার ক্ষেত্রে অনামি মেধাবীদের পাণ্ডুলিপি ফেলে রাখা হয়। আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে তেমন পাণ্ডুলিপি চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করেছেন একাডেমির কর্মকর্তা।
বছরে একবার বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যরা কিছু দাবি বা সংস্কার প্রস্তাব করার সুযোগ পান। কোনো কোনো প্রস্তাব গৃহীতও হয়। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নিত হলো কি না তা পরের বছরের সাধারণ সভায় জানানো হয় না। আসলে সেগুলো হিমঘরেই পড়ে থাকে।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয় কোন প্রক্রিয়ায় তা কেউ জানে না। তবে তারা দেশের সাহিত্যজগতের বরেণ্য মানুষ, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা অধিকাংশই বয়স্ক। দেশের প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে ওঠা লেখকদের সবার লেখা সম্পর্কে ধারণা থাকে না অনেকেরই। ফলে একাডেমির কয়েকজনের তোলা নামগুলোই পুরস্কার পায়।
গত কয়েক বছর ধরে পুরস্কারের একটি প্যাটার্ন লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন কয়জন আমলা পাবেন পুরস্কার, বাংলা একাডেমির অন্তত একজন কর্মকর্তা পাবেন পুরস্কার, আর মহাপরিচালকের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ পাবেন পুরস্কার। নিশ্চয়ই যে কোনো পেশার লেখক পুরস্কার পেতে পারেন। কিন্তু যখন পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকের চাইতে অধিকতর যোগ্য লেখককে বাদ দিয়ে পুরস্কারটা তাকে দেওয়া হয়, তখন তার সমালোচনা হবেই। অথচ একাডেমি কোনো সমালোচনায় কান দেয় না। আত্মসমালোচনা করে না। সেইসাথে দেখা যাচ্ছে কোনো কবি বা লেখকের কাজের ক্ষেত্র বাদ দিয়ে তাকে অন্য ক্যাটেগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। এগুলো সবই ভব্যতার ব্যত্যয়।
১০ বছর আমি কী করেছি?
আলোচনা করেছি, সভা-সমাবেশে এসব কথা বলেছি, পত্রিকায় লিখেছি, ফেসবুকে লিখেছি অনবরত। প্রতিবাদের সর্বশেষ ধাপ পুরস্কার ফেরত দেওয়া। আমার মতো একজন লেখকের এরচেয়ে বেশি আর কোনো সামর্থ্য নেই।